যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মীয় সর্বোচ্চ মহা সাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের ১০৬তম জন্মদিন উপলক্ষে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে টানা ৫ দিনব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার টানা ৫দিন (৮ জানুয়ারী) সকাল থেকেই বনভন্তের জন্মদিনকে ঘিরে রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘসহ পূণ্যার্থী বিভিন্ন উপজেলা জেলা গ্রাম থেকে হাজার হাজার ভক্তদের ঢল নামে। এই উপলক্ষে ভোর সকালে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন পর কেক কাটেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার অনুষ্ঠান মঞ্চে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, বুদ্ধমুর্তি সংঘদান হাজার বাতিদান প্যাগডা উদ্দ্যেশ্যে অর্থদান ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডুপানিয় দানসহ নানাবিধ দানযজ্ঞ সম্পাদন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে আগত দায়ক দায়িকাদের উদ্দেশ্য স্বাগত বক্তব্য করেন রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি সভাপতি গৌতম দেওয়ান,বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রেস্ট্রের ঢাকা সহ সভাপতি সুকেশ চাকমা, রাঙামাটি সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, ঢাকা থেকে প্রধান অতিথি জিনব্যোধি মহাস্থবির ভিক্ষু বৌদ্বধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন, পরে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান ও অধ্যক্ষ বনভন্তের প্রধান শীষ্য শ্রীমৎ শ্রদ্ধালংকার মহাথের। এ সময় কয়েক হাজার পূর্ণার্থী ও ভক্তদের সাধু সাধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে রাজবন বিহার প্রাঙ্গন।
পরে বনভন্তের জন্মদিন উপলক্ষে রাজবন বিহারে সংরক্ষিত বিশেষ কফিনে রাখা বনভন্তের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীসহ সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ। এসময় পূর্ণার্থী ও ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
এর আগে ভোরে বনভন্তের ১০৬তম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাথেরো। এসময় ভিক্ষুসংঘ ও উপাসক উপাসিকা পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। কেক কাটা শেষে বনভান্তের লেখা জয় জয় বুদ্ধ পতাকা গানটি পরিবেশন করে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন করেন সমবেত পুণ্যার্থীরা।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি রাজবনবিহার, নানা ধর্মীয় আয়োজনের মাধ্যমে রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের ১০৬তম জন্মদিন পালিত হচ্ছে। তিনি জানান, বনভন্তে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু হলেও সকাল থেকেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ঢল নেমেছে রাজবন বিহারে।
উল্লেখ্য, আর্যপুরুষ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে ১৯২০সালের ৮ জানুয়ারী রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন ১১৫ নং মগবান মৌজার মোড়ঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বনে-জঙ্গলে দীর্ঘসময় ধরে তিনি সাধনা করেছিলেন বলেই তিনি বনভন্তে হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি শিশুকাল থেকেই ধ্যান সাধনা করতেন। দীর্ঘ সাধনার পর অবশেষে তিনি সিদ্ধি লাভ করেন। তারপর থেকেই বনভন্তে শুরু করেন ধর্ম প্রচার।
বনভন্তে ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারী ৯৩ বছর বয়সে পরিনির্বাণ (দেহত্যাগ) লাভ করেন। ধর্মীয় পরিভাষায় যা মহাপরিনির্বাণ হিসেবে পরিচিত। বনভন্তে সবসময় শান্তির কথা বলেছিলেন। বনভন্তের জন্মদিনে সেই শান্তির বাণী বুকে ধারন করে পাহাড়ে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।