আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কর্মী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাছিমা বেগম ও পলাশবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মারো সামাদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। বিতর্কিত কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই কমিটি টাকার বিনিময়ে গঠন করা হয়েছে এবং অনুপ্রবেশকারীদের পদ দেওয়া হয়েছে।
গত ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাইবান্ধা-৩ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচিত হতে ফরম সংগ্রহ করছিলেন অনেক নেতাকর্মী। এর মধ্যে ছিলেন অরজিনা পারভীন চাঁদনী, যিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।
চাঁদনী তখন বলেছিলেন, তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তার বাবা, দাদা এবং নানা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন, এবং তিনি নিজেও বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলেন।
তারা এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে একটি ফোন কল প্রকাশ করেন, যেখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম মণ্ডলকে বলছেন, “ব্যবসা করতে গেলে আওয়ামী লীগের সাথেই করা লাগবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় সাহায্যও প্রয়োজন, টাকা-পয়সা সব চাঁদনী খরচ করবে।”
টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সাবেক নেত্রীকে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের নব অনুমোদিত কমিটির সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা।
গত ২০ ডিসেম্বর জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি দলীয় প্যাডে পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের কমিটির সেই তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হলে তা মূহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়। এরপর থেকে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের দলীয় নেতাকর্মীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে৷ তারা বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷
তালিকা অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলে যে নারীকে সভাপতি করা হয়েছে তার নাম আরজিনা পারভীন চাদনী। আগে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন এবং তিনি সেই সময় বিএনপির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এটি নিয়ে বিএনপিসহ এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন যে টাকার বিনিময়ে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে।
ওই কমিটিতে যে শুধুমাত্র চাঁদনীই চিহ্নিত আওয়ামী লীগার তা নয়, সাংগঠনিক পদে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনিও একজন সক্রিয় মহিলা আওয়ামী লীগ কর্মী ছিলেন।
একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, নাসিমা আকতার ৪ নং বরিশাল ইউনিয়নের তাঁতী লীগের সভানেত্রী ছিলেন।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী পৌরসভার বিএনপি সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, পলাশবাড়ী উপজেলা বিএনপির মহিলা দলের কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে, ৫ আগস্টের পূর্বে দলের পক্ষে তাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না। অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মিল্লাত সরকার মিলন বলেন, ‘বিগত ১৬/১৭ বছরের লড়াই সংগ্রামে যার কোনো ছায়া পর্যন্ত কেউ দেখেনি সে কিভাবে সভাপতির মত একটা পদ পায়, আমার বুঝে আসে না। আমাদের এই রকম হাইব্রিড নেত্রীর দরকার নেই।
উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর সরকার মিনু বলেন, ‘যিনি আওয়ামী লীগের মহিলা সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন কিনেছে, তিনি কীভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহিলা দলের সভাপতি হয়। যারা এই কমিটি দিয়েছে তারা কি অন্ধ। কোনো খোঁজ-খবর না নিয়ে কমিটি দিয়েছে। আমরা জিয়ার সৈনিক রাজপথ আমাদের ঠিকানা। আমরা কখনও আওয়ামী লীগের পেতাত্মাদের দলে নেবো না।’
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন্নবী টিটুল জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।