রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ০৫:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

বড় খামারীদের পাশাপাশি কোরবানির পশু প্রস্তুতে ব্যস্ত প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তরা

আসাদুজ্জামান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
  • Update Time : সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
  • ৭৯ Time View

কুড়িগ্রামের পৌর শহরের দালালি পাড়া গ্রামের স্বপ্না বেগম(৩৪) ও এরশাদুল হক দম্পতির বসবাস। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে এই কৃষক দম্পতির সংসারে টানাপোড়ন লেগেই থাকতো। অভাবের সংসারে স্বামীকে সহযোগিতা করতে পাঁচ বছর আগে স্বপ্না বেগম এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি গরু কিনে পালন শুরু করেন। এক বছর পর সেই গরু বিক্রি করে কিছু টাকা সংসারের কাজে লালিয়েছেন। বাকি টাকা দিয়ে নতুন গরু কিনেছেন। এখন স্বপ্না বেগমের খামারে রয়েছে পাঁচটি গরু। এরমধ্যে তিনটি ষাঁড় গরু এবারের কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
শুধু স্বপ্না বেগম নয়, কুড়িগ্রামে এরকম অনেক প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তা ঘরে বসে অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য করছেন গরুর খামার। বড় বড় গরুর খামারীদের পাশাপাশি ঈদকে কেন্দ্র করে পান্তিক নারীদের খামারের কারণে জেলায় কুরবানীর পশুর চাহিদা পুরণ হয়ে ৫০ হাজার কুরবানীর পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে।

সরবজমিনে ১১ মে ( রোববার) স্বপ্না বেগমের খামারে গিয়ে দেখা যায়, গরু পরিচর্যার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে তিনি। গরুকে খাবার দেয়া, গোসল করানো, গোবর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে চলছে আরও অন্যান্য ব্যস্ততা।

স্বপ্না বেগম বলেন,’ দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে অনেকটাই অভাব অনাটনে ছিলাম। আমার স্বামী একজন কৃষক। কৃষি কাজ করে পরিবার চালানো অনেক কঠিন। তার মধ্যে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা খরচ তো আছে। অনেক কষ্টে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে একটি গরু কিনেছিলাম পাঁচ বছর আগে। ষাঁড় কিনে সেটা দিয়েই আমার খামার শুরু করেছিলাম। ষাঁড়টি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে আবার নতুন করে গরু কিনেছিলাম। এখন আমার খামারে পাঁচটি গরু আছে। তার মধ্যে তিনটি ষাঁড়। ষাঁড় গরু এবার ঈদে বিক্রি করব। খামারের ষাঁড় গরুগুলো সম্পূর্ণ দেশীয় ভাবে লালন-পালন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সংসারের অনেকটাই আমি দায়িত্ব নিতে পারি। আমাকে এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে। আমি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আরো সহযোগিতা আশাকরি। যদি আমাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে আমার খামারটি আরো বড় করতে পারবো।’

স্বপ্নার স্বামী এরশাদুল হক বলেন, ‘ আমাদের অভাবের সংসারে আমার স্ত্রী গরুর খামার করে অনেকটা সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে। আমি তার খামারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করি।এতে করে সংসার পরিচালনা করা আমার জন্য অনেক সহজ হচ্ছে।’
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবছর জেলায় কোরবানির পশুর মোট উৎপাদনে যেমন বড়- বড় খামারিরা আছে, ঠিক তেমনি প্রান্তিক পর্যায়ে এরকম ছোট- ছোট নারী উদ্যোক্তাও রয়েছে। কৃষ্ণপুর, পৌরসভার রিনা বেগম। চরুয়াপাড়া, পৌরসভার সখিনা বেগম। তালতলা,পৌরসভার কোহিনুর বেগম। প্রতাপ, কাঁঠালবাড়ির জাহেদা বেগম। যোতগোবর্ধন,কাঁঠালবাড়ির মোছাঃ মুক্তা বেগম। জোতগোবর্ধন, কাঠাঁলবাড়ির মাসুদা আক্তার। খালিশাকালো, কাঠাঁলবাড়ির মোছাঃ নুরজাহান বেগম সহ আরো অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তারাও কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ কোরবানিকে কেন্দ্র করে জেলায় ৩ লক্ষ পশু প্রস্তুত আছে। আমাদের জেলায় কোরবানির জন্য পরশু চাহিদা রয়েছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার। সেক্ষেত্রে আমাদের জেলায় কোরবানি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে ৫০ হাজার। জেলায় কোন সংকট নেই, দাম তাই অনেকটা স্বাভাবিক থাকবে।জেলায় বড়ো খামারিদের সাথে তাল মিলিয়ে ছোট- ছোট অনেক নারী উদ্দ্যোতাদের অংশগ্রহণ অনেক।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 nctelevision.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin