দীর্ঘদিনের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সংকটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু করেন তারা।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব আবাসন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ এবং নির্ধারিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হয়নি। ২০ বছর পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি সেই আন্দোলনেরই অংশ।
শিক্ষার্থীদের মূল দাবি:
১. আবাসন ভাতা বাস্তবায়ন:
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তত ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য মাসিক আবাসন ভাতা বরাদ্দ দিতে হবে। রাজধানীতে থাকার বাড়তি খরচে জবি শিক্ষার্থীরা বরাবরই চাপে থাকেন।
২. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও হল নির্মাণ:
পুরান ঢাকার ড. হাবিবুর রহমান হল এবং বাণী ভবনের নির্মাণকাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
৩. অগ্রগতি জানানো বাধ্যতামূলক:
প্রশাসনকে ১৫ দিন অন্তর ক্যাম্পাসে এসে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থেকেই এই দাবির জন্ম।
৪. জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ:
ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ১৫ মে’র মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে।
সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ‘লং মার্চ’ শুরু করেন। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও স্লোগানে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। পদযাত্রাটি শান্তিপূর্ণ হলেও ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা একসাথে অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বারবার আশ্বাস পেয়েছেন, বাস্তব পদক্ষেপ পাননি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই পদযাত্রা শুধুমাত্র একটি প্রতিবাদ নয়, বরং এটি উচ্চশিক্ষায় সমান সুযোগ এবং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার জন্য এক দৃপ্ত আহ্বান। তারা প্রশাসন এবং সরকারের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছেন—সমাধান চাই, আশ্বাস নয়।