রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

মাভাবিপ্রবির শাহজামান দীঘি ঘিরে অবৈধ স্থাপনা, প্রতিবাদে উত্তাল শিক্ষার্থীরা

মো: জিসান রহমান, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি
  • Update Time : রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫
  • ৮৬ Time View

টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) প্রাঙ্গণে অবস্থিত ঐতিহাসিক পীর শাহজামান দীঘি আজ অস্তিত্ব সংকটে। তিন শতাধিক বছরের পুরোনো এই দীঘিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একের পর এক অননুমোদিত দোকানপাট, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার পাশাপাশি সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দীঘিটি সংরক্ষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে আজ ২৫ মে (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

বিক্ষোভ মিছিলটি শহিদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ২য় গেট ঘুরে ১ম গেট হয়ে ‘প্রত্যয় একাত্তর’ ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে শিক্ষার্থীরা ভাইস-চ্যান্সেলরের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

দীঘিটির ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়। ১৬৬৮ সালে পীর শাহজামান (রহ.) দীঘিটি খনন করান। পরবর্তীতে এটি সন্তোষ জমিদারের দখলে চলে গেলেও, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রচেষ্টায় এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে পুনরায় জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হয়।

বর্তমানে দীঘিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর চারপাশে গড়ে উঠেছে একাধিক অননুমোদিত স্থাপনা। বিশেষ করে দক্ষিণ সীমানায় খুঁটি ও বাঁশ পুঁতে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, যা পরিবেশ দূষণ ও নান্দনিকতা বিনষ্ট করছে। দীঘির পানিতে নিয়মিতভাবে আবর্জনা ফেলায় জলাধারটি দুষিত হয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, দীঘিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও পরিবেশগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই অবৈধ দোকানপাট সরিয়ে দীঘির সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “আমরা আমাদের স্থাপনাগুলো কীভাবে উন্নত ও সুন্দর করা যায় তা বিবেচনায় নিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফোরকান হোসেন বলেন, “আমরা চাই দীঘির দক্ষিণ পাশের দোকানগুলো সরিয়ে চারপাশে হাঁটার উপযোগী রাস্তা ও গাছপালা দিয়ে ঘেরা পরিবেশ বান্ধব এলাকা গড়ে তোলা হোক।”

সিপিএস বিভাগের শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান সাজু বলেন, “দীঘিটি প্রায় ৩৫০ বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। আমরা চাই এর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দীঘিটিকে সংস্কার করা হোক।”

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, “পীর শাহজামান দীঘি শুধু জলাধার নয়, এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও পরিবেশের অংশ। তাই এর সৌন্দর্য রক্ষা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এখন সময়ের দাবি।”

স্মারকলিপিতে উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি:
১. দীঘির চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করে হাঁটার উপযোগী রাস্তা তৈরি।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় প্রাচীর নির্মাণ।
৩. দীঘির চারপাশে পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।
৪. নির্দিষ্ট দূরত্বে ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান স্থাপন।
৫. দীঘির ইতিহাস তুলে ধরে একটি স্থায়ী ফলক স্থাপন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে দীঘিটি যেমন তার পুরোনো গৌরব ফিরে পাবে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও আরও সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 nctelevision.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin