রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ০৫:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

ঈদুল আজহার নামাজ ও কুরবানির শুদ্ধ নিয়মাবলী: পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা

মো. জিসান রহমান, প্রতিনিধি
  • Update Time : শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
  • ৪১ Time View

আগামীকাল শনিবার, ৭ জুন ২০২৫, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২৮ মে বুধবার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এ. এফ. এম. খালিদ হোসেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা করে কমিটি ঘোষণা করে—বাংলাদেশের আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে অনুযায়ী, ২৯ মে থেকে হিজরি জিলহজ মাস গণনা শুরু হয় এবং ১০ জিলহজ অর্থাৎ ৭ জুন শনিবার ঈদুল আজহা পালিত হবে বলে জানানো হয়।

ঈদুল আজহার দিনটি মুসলিম জাতির ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের এক ঐতিহাসিক নিদর্শনের দিন। মহানবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ পালনে তাঁর প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন, সেই মহান আত্মত্যাগের স্মৃতিতে প্রতি বছর এই দিনে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি করে থাকেন।

ঈদের সকাল শুরু হয় বিশেষ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। ফজরের পর থেকে সূর্য কিছুটা উপরে ওঠার পর ঈদের জামাত শুরু হয় এবং তা জোহরের আগেই শেষ করতে হয়। এই নামাজ দুই রাকাতের হয়ে থাকে, তবে এর রয়েছে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য—প্রত্যেক রাকাতে অতিরিক্ত তিনটি করে তাকবির দেওয়া হয়, যা ঈদের নামাজকে অন্যান্য নামাজ থেকে আলাদা করে। নামাজ শেষে ইমাম খুতবা প্রদান করেন, যা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.) ঈদের দিন সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করতেন, এরপর কুরবানি করতেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নামাজের আগে কুরবানি করেছে, সে যেন নতুন করে কুরবানি করে।” (সহিহ বুখারি)

নামাজের পর শুরু হয় কুরবানির আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজেদের সাধ্যমতো গরু, ছাগল বা উট কুরবানি করেন। ইসলামি শরিয়তে কুরবানিকৃত পশুর গোশত তিনভাগে ভাগ করে বণ্টনের নির্দেশ রয়েছে। একভাগ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে, একভাগ গরিব-দুঃস্থদের মাঝে এবং একভাগ নিজের পরিবারের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। আল-কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সুরা হজ: ৩৭)। আর হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, “তোমরা কুরবানির গোশত খাও, সংরক্ষণ করো এবং গরিবদের খাওয়াও।” (সহিহ মুসলিম)

এছাড়া কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে তার অর্থ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি দান করা অথবা মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করাই উত্তম।

ধর্মীয় বিশিষ্টজনরা মনে করেন, ঈদুল আজহার মূল বার্তা হলো ত্যাগ, তাকওয়া ও সাম্য। এই উৎসবের মাধ্যমে ধনী-গরিব সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। পশু কুরবানির বাহ্যিক রূপের চেয়েও অন্তরের আত্মসমর্পণই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আগামীকাল ঈদুল আজহার দিনে দেশের প্রতিটি মসজিদ, ঈদগাহ এবং জনপদে এই মহান ইবাদত যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় অনুশাসন অনুসারে পালিত হবে—এমনটাই প্রত্যাশা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 nctelevision.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin